১৪ই মার্চ, ২০২৫

এস আলমের ‘গাড়িকাণ্ড’—শোকজের জবাব নিয়ে কেন্দ্রে দক্ষিণের তিন বিএনপি নেতা

শেয়ার করুন

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের তদারকিতে রাতের আঁধারে এস আলমের ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর তিনজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে দলটির কেন্দ্রী কমিটি।

কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া তিন নেতা হলেনÑ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম এবং কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম মামুন মিয়া।

সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। আজ রোববার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখোমুখি হওয়ার কথা রয়েছে তাদের।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম। তিনি বলেন, যে বিষয়টি নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সেটি গতকালকের সংবাদ সম্মেলনে আমরা পরিষ্কার করেছি। যেহেতু কেন্দ্র থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে তাই দলকেও জবাব দেব। সে জন্য মূলত আমরা ঢাকায় অবস্থান করছি।

কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে কী জবাব দিচ্ছেন, এমন প্রশ্নে কোনো উত্তর দেননি তিনি।

এস আলমের ওয়্যারহাউসে যা ঘটেছিল

গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক এলাকায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন একটি ওয়্যারহাউসের ভেতর থেকে বিলাসবহুল ১৪টি গাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা গণমাধ্যমকে জানান, তিনটি গাড়ি করে অন্তত ১৫ জনের একটি দল ওয়্যারহাউসের সামনে আসেন। এরপর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, পটিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব অহিদুল আলম চৌধুরী পিবলু এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ হোসেন নয়নকে সেখানে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।

ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, এনামুল হক এনামের তদারকিতে গাড়িগুলোকে ওয়্যারহাউস থেকে বের করা হচ্ছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ওই প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, একটি গাড়ি থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের গাড়ি চালক মনসুরকে নামতে দেখা যায়। সেই গাড়ির ভেতরে আবু সুফিয়ান বসে ছিলেন বলে উপস্থিত অন্যদের ধারণা। নইলে ওয়্যারহাউসে তার চালকের আসার কথা নয়। কিছুক্ষণ পর ১৪ জন ১৪টি গাড়ি চালিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা গাড়ির ভেতর বিপুল অঙ্কের টাকা থাকতে পারে বলে ধারণা করেছেন।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতাদের সংবাদ সম্মেলন

গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশের পর গতকাল শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুর ২টার সময় দোস্ত বিল্ডিং দলীয় কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনামসহ জেলা নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

তাদের দাবি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি পক্ষটি করিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, ২৯ আগস্ট নগরের কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় মীর গ্রুপের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোনে প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পরবর্তীতে বিএনপি’র নাম দিয়ে চাঁদা দাবি করছে বলে জানতে পারেন তারা। বিএনপির নামে চাঁদা দাবির কথা শুনেই তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, আমরা কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় অবস্থিত মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে যাই এবং চাঁদাবাজদের হুমকির ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করি। উল্লেখ্য, বিএনপি নামধারী চাঁদাবাজরা সেদিন দুপুর ১টা থেকে ৩টা এবং পরবর্তীতে বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে চাঁদা দিতে হবে বলে ০১৯৭৪৩৪৫৩২৪ নম্বর থেকে বারবার হুমকি দিতে থাকে। বিএনপির দায়িত্ব¡শীল নেতা হিসেবে বিএনপির নাম ব্যবহার করা চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করতেই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে ৩০ মিনিট মত অবস্থান করে মীর গ্রুপের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করি এবং বিএনপি নাম দিয়ে কেউ যদি কোন ধরনের চাঁদা দাবি করে, তাহলে তাদেরকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে আমরা চলে আসি। মূল ঘটনা হলো এটা। অথচ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রচার করেছে আমরা নাকি কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন মইজ্জার টেক এলাকায় অবস্থিত এস আলম গ্রুপের ওয়্যার হাউজে গিয়েছিলাম। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছাড়া আর কিছু নয়।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন